আগামী অক্টোবরের মধ্যেই সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যেতে পারে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিন। বর্তমানে ব্রাজিলে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষার সর্বশেষ ধাপ ফেজ থ্রি হিউম্যান ট্রায়াল চালানো হচ্ছে।
ফেজ ওয়ান ট্রায়ালের রিপোর্ট তৈরি হয়ে গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, করোনার বিরুদ্ধে মানবশরীরে ভ্যাকসিনটি জোড়া প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ার সক্ষমতা দেখিয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনার টিকা এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে দুই ধরনের প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। গবেষকরা বলছেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী অক্টোবরেই তারা টিকা আনতে সক্ষম হবেন।
যে কোনো টিকার অত্যাবশ্যকীয় দুটি উপাদান হলো অ্যান্টিবডি ও টি-সেল রেসপন্স তৈরি করা। অ্যান্টিবডি শরীরের মধ্যে থাকা ভাইরাস শনাক্ত করে এর বিরুদ্ধে লড়ে যায় এবং ভাইরাসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ‘টি-সেলস’ শুধু অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্যই করে না, ভাইরাসে সংক্রমিত কোষগুলোর ওপরও কাজ করে এবং ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।
অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ধাপের পরীক্ষায় এ দুটি প্রতিরক্ষার সাফল্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অক্সফোর্ডের টিকা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত গবেষকদের বরাতে দ্য টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে জানায়, কোভিড ১৯-এর বিরুদ্ধে অক্সফোর্ডের টিকার মানবপরীক্ষা দারুণ ইতিবাচক ফল দেখিয়েছে এবং অক্টোবর নাগাদ টিকা প্রস্তুত হয়ে যেতে পারে। অক্সফোর্ডের পাশাপাশি বিশ্বের আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল চালাচ্ছে।
এগুলোর মধ্যে রাশিয়ার সেচনেভ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভ্যাকসিন সব পরীক্ষায় সফল হয়েছে বলে ঘোষণাও দিয়েছে। তবে সবার চেয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা যে কয়েক কদম এগিয়ে, তা মেনে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার দিক থেকেই শুধু নয়, ফলাফলেও তাদের প্রতিষেধক ব্যতিক্রমী। সারা গিলবার্টের নেতৃত্বে অক্সফোর্ডের গবেষকরা জানান, অ্যান্টিবডি তৈরির পাশাপাশি তাদের তৈরি ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধে ‘টি-সেলস’ তৈরিতেও সক্ষম। মডার্না, ফাইজার, বায়োএনটেকসহ বিশ্বের অনেক সংস্থাই তাদের ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাচ্ছে।
কিন্তু তাদের কেউ এখন পর্যন্ত দাবি করতে পারেনি, তাদের ভ্যাকসিনে অ্যান্টিবডির সঙ্গে ‘টি-সেলস’ তৈরি হচ্ছে। ‘টি-সেলস’ শুধু অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্যই করে না, ভাইরাসে আক্রান্ত কোষগুলোর ওপরও কাজ করে এবং ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। হাম, সর্দি-কাশির মতো রোগে এই টি-সেল?স অত্যন্ত কার্যকর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি খুব বেশি দিন থাকে না। কিন্তু এই টি-সেলস শরীরের মধ্যে বহু বছর পর্যন্ত থাকে। পরবর্তীকালে কখনো ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এ ‘টি-সেল’গুলোই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে এবং এর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সহযোগী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার মাধ্যমে ফেজ ওয়ান ট্রায়ালে এক হাজার জনের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে। পরে তাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষায় করোনা প্রতিরোধে সক্ষম অ্যান্টিবডি ও ‘টি-সেল’ দুয়েরই অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ দ্বিগুণ সক্ষমতাই অক্সফোর্ডের স্বাতন্ত্র্য এবং দ্রুত সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
অক্সফোর্ডের এই টিকার কার্যকারিতা প্রমাণের পর অনুমোদন পেলে ২০০ কোটি ডোজ সরবরাহ করবে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। অক্টোবর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়ে যেতে পারে। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্সফোর্ডের গবেষকরা এবার ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য ভিন্ন পথ বেছে নিচ্ছেন। পরীক্ষাগারে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায় মানবশরীরে ভ্যাকসিন ও ভাইরাস প্রয়োগ করে এর কার্যকারিতা দেখবেন। এ রোগের কোনো প্রমাণিত চিকিৎসা নেই জেনেও এ ধরনের পরীক্ষা করার বিষয়টি বিতর্কিত হতে পারে। তবে এ পদ্ধতিতে স্বল্পসংখ্যক স্বাস্থ্যবান মানুষের ওপর পরীক্ষা করে তার তথ্য নিয়ে দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল চালাবেন গবেষকরা।
Leave a Reply